মসজিদ থেকে ভেসে আসছে সুমধুর আযানের ধনি । এমন সুমধুর কণ্ঠ শুনলে যে কেউ অবাক হবে। আরো বেশি অবাক হয়েছি । যখন জেনেছি তিনি একজন অন্ধ হাফেজ । বলছিলাম অন্ধ হাফেজ আব্দুল কাদেরের কথা ।
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলায় এক গরীব পরিবার এ জন্মগ্রহন করেন তিনি। তাদের পাঁচ ভাই বোনের সংসারে তিনি সবার বড়। যার জন্য তার পরিপূণ চাহিদা পূরণ করাতে পারেনি তার পরিবার । তাছাড়া পড়াতে পারেননি স্কুলে । তাই বড় সন্তান আব্দুল কাদেরকে ভর্তি করান মাদ্রাসায় । মাত্র ১৮ বছর বয়েসে তিনি শেষ করেন হাফেজী ও মাওলানা। তবে এই সফলতা সহজ ছিল না । সফলতার পিছনে একটা প্রতিবন্ধকতা ছিল। সেটা হল তিনি চোখে দেখতে পান না । অন্ধত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহন করেন তিনি । কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি । তিনি শুনেশুনে মুখস্থ করেন কোরআন শরিফ । দুরের মসজিদে পড়ালেখা করার জন্য পায়ে হেটে চলাচল করতেন । যার ফলে সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক দূর্ঘটনার।
তিনি অনেক প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন । কিন্তু কখনও কোন পুরস্কার পাননি তিনি । প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সেটা ঘোষনার পরও জুটেনি কোন পুরষ্কার । তিনি যখন মাদ্রাসায় যেতান তখন তার আশেপাশের মানুষরা তাকে নিয়ে হাসি তামশা করত । সে অন্ধ ছিল বলে কেউ তার সাথে খেলতে চাইতো না , মিশতো না, আবার কথাও বলত না। আক্ষেপ আবদুল কাদের বলেন, সবার পড়া অনেক তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়ে যেত কিন্তু আমার অনেক দেরি হত।
হাফেজি পড়া অবস্থায় নড়াইল এর সাবেক এমপি তার চোখের অপারেশনর জন্য কিছু টাকা দেন । চোখ অপারেশন করলেও কোন ভালো ফল হয়নি।
চরম দারিদ্রতা থেকে বাঁচতে নিজেই শুরু করলেন চাকরি করা । দুই বছর ধরে কুচিঁয়াগ্রাম মসজিদ এ চাকরি করছেন তিনি । বর্তমানে তার জীবনযাপন সহজ হয়ে গেছে । কারন এখন তিনি স্বাবলম্বী । ভবিষ্যৎতে তিনি অন্ধদের পড়ালেখা করানোর জন্য একটি মাদ্রাসা স্থাপন করতে চান ।
পাঠকের মন্তব্য