সাতক্ষীরা জেলা শ্যামনগর উপজেলায় জয়শ্রী চক্রবর্তীর আত্নহননে প্ররোচিত কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আয়োজনে শত শত মানুষের সমন্বয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকাল ১০ ঘটিকায় কৃতি শিক্ষার্থী মানববন্ধনে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে প্রশাসনকে ৪৮ ঘন্টা সময় দিয়ে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানান সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের স্পেশাল পিপি নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শ্যামনগর সদর চেয়ারম্যান জনাব এ্যাডঃ এস এম জহুরুল হায়দার (বাবু)।
তিনি বলেন দোষী ব্যাক্তি যেই হোক না কেন তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওয়াতায় এনে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক যাতে এমন ঘৃন্য অপরাধ যাতে কোন দিন কোন ব্যাক্তি করার সাহস না পায়। তিনি আরো বলেন উক্ত সময়ের মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার না করলে আরো কঠোর প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এসময় মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন নওয়াবেঁকী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জনাবঃ একরামুল কবির(বাবলু), আটুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জনাব- আবু সালেহ বাবু, অত্র কলেজের শিক্ষক কর্মচারী, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ সহ স্থানীয় সুশীল সমাজের জনগন, প্রমুখ।
উল্লেখ্য অনেক স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল জয়শ্রী চক্রবর্তী। আর স্বপ্নপূরণ করতেই অনেক কষ্টে এসএসসি পাস করে সে । ভর্তি হন কলেজে। শ্যামনগর নওয়াবেঁকী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী জয়শ্রী। কিন্তু মাঝপথে তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। তাকে ঘিরে পিতা-মাতার দেখা স্বপ্নে ছাই ফেলেছে বখাটেরা। জয়শ্রী শ্যামনগর বয়ারশিং গ্রামের মাখন চক্রবর্তীর কন্যা। প্রতিদিন নিজ বাড়ি থেকেই কলেজে আসা-যাওয়া করতেন জয়শ্রী। এই আসা-যাওয়ার পথে বখাটেরা তাকে নানাভাবে বিরক্ত করতো- উত্ত্যক্ত করতো। সেদিন ছিল ২৫শে অক্টোবর বুধবার। বেলা সাড়ে ১২টায় কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো জয়শ্রী। পথিমধ্যে নওয়াবেঁকী বাজারের বাঁশ হাটার কাছে পৌঁছালে বড় কুপট গ্রামের বখাটে শেখর মণ্ডলসহ ৩ যুবক জয়শ্রী চক্রবর্তীর গতিরোধ করে। বখাটেরা প্রথমেই জয়শ্রীর ওড়না কেড়ে নেয়। এ সময় জয়শ্রী প্রতিবাদ জানালে তাকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে। এ সময় বখাটেদের হাতে থাকা কাঁউচি দিয়ে কলেজছাত্রীর মাথার চুল কেটে দেয় বখাটেরা। জয়শ্রী চিৎকার করতে থাকলে স্থানীয়রা ছুটে আসে। বখাটেরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় । এ ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে জয়শ্রী কাউকে কিছু না জানিয়ে তাদের পারিবারিক ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করে আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরবর্তীতে অবস্থা খারাপ হলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতের মাতা বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছেন। যার নং-২১। এদিকে ঘটনার পর থেকে বখাটে শেখর এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়ে দূরপ্রান্তে পাড়ি জমিয়েছে। জানা গেছে বখাটে শেখর মন্ডল ও তার পিতা ভারতে পাড়ি জমিয়েছে।
এ বিষয়ে নিহতের পিতা মাখন চক্রবর্তী জানান বখাটে শেখর মণ্ডল পয়সাওয়ালা এবং প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ কারণে থানায় মামলা করতে বা সাংবাদিকদের জানাতে দেরি হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সৈয়দ মান্নান আলী বলেন,বিষয়টি জানার পরপরই থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। এছাড়া আসামীদের ধরতে পুলিশ খুবই তৎপর রয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য