জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের অজান্তে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা খোয়া গেলে সেই টাকা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের হিসাবে ফেরত দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সম্প্রতি একাধিক ব্যাংকে গ্রাহকের অজান্তে চেক জালিয়াতিসহ নানাভাবে অর্থ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রাহকের কাছে চেকের পাতা রয়ে গেছে অথচ ওই চেক দিয়ে তাঁর হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে গ্রাহকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টাকা ফেরত পেতে মামলা দায়ের করতে হয়। তাতে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ার পাশাপাশি অর্থেরও অপচয় ঘটে। গ্রাহকের এ ধরনের হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চেক জাল করে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছাড়াও চেকের পাতা বা চেক বই চুরি করে, চেক জালিয়াতি ও তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমেও এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। এসব ঘটনায় ব্যাংক আদালতে মামলা করে, তবে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে গ্রাহকের কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা না মিললে খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়া যুক্তিযুক্ত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিক গ্রাহককে খোয়া যাওয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। ব্যাংকগুলোকে এ সিদ্ধান্ত পালনের নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, চেক জাল করে গ্রাহকের হিসাব থেকে অর্থ জালিয়াতি বা প্রতারণার ঘটনায় ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের দাবি পূরণ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা গ্রাহক কারও সংশ্লিষ্টতা না মিললে এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ বা ত্রুটির কারণে অর্থ জালিয়াতি বা ক্ষতি প্রমাণিত হলে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকের অজান্তে হিসাব থেকে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে। মামলার কারণে ব্যাংকগুলোও অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ কারণে গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নতুন এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য