প্রজনন মৌসুমে বন্ধ রয়েছে ইলিশ ধরা ও বিক্রয় কাজ। তাই জাল বুনেই সময় পার করছেন বরগুনা সদরসহ ৬টি উপজেলার জেলেরা। বেকার সময় পার করছেন দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষ। প্রান্তিকের এসব দারিদ্র মানুষের জন্য নেই অন্য কোনো কাজের সুযোগও।
তবে যাদের শক্তি সামর্থ আছে তারা কেউ কেউ মাটি কাটা, রাজমিস্ত্রির জোগালে (সহকারি) অথবা হাট বাজারে মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অপরদিকে যাদের মাছ ধরা ব্যতীত অন্য কোন কাজের অভ্যাস নেই তারা মনোযোগী জাল বুনন ও মেরামতের কাজে।
০১ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের নদ-নদীতে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মা ইলিশ রক্ষা ও ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতেই মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে থাকে। ফলে এ সময়ে ইলিশ শিকার করতে জেলেরা নদী বা সমুদ্রে যেতে পারেনা। এমনকি ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় বা পরিবহনও করতে পারেন না। ফলে বাধ্যগত পরিবর্তন আসে জেলেদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও জীবিকায়।
ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও পেটের তাগিদে এসব জেলেরা নিষেধাজ্ঞার এই ২২ দিনের জন্য বেছে নিয়েছেন দিন মজুরের কাজ। রাজমিস্ত্রির জোগালে (সহকারি), ট্রাক থেকে পণ্য নামানো, ভ্যান চালানো, মাটি কাটার কাজ, সবজির ক্ষেতে জোগালে কাজ করাসহ নানা ধরনের কাজে দেখা যায় এসব জেলেদের। অর্থকষ্ট,পেশা আর নেশার তাড়নায় জেলেদের ইলিশ শিকারে যেতে মন চাইলেও সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা নদী বা সাগরে যাওয়ার সাহস করেন না। তবে অভাবের সংসারে প্রতিটি জেলেই যেন নিরুপায় হয়ে চেয়ে থাকেন নিষেধাজ্ঞা শেষের অপেক্ষায় খোলা নদীর মোহনায়।
বরগুনার তালতলী উপজেলার মোঃ হারুন হাওলাদার নামে এক জেলে জাল মেরামতের ফাকেঁ বলেন, “সাগরে মাছ ধরতে গ্যালে জালের ক্ষতি স্বাভাবিক,জাল ছিড়ড়া যায় সুতাও নষ্ট হয়। যদি সারাইয়া না লই এই জাল দিয়া শান্তিতে আর মাছ ধরন যাইবেনা। এহন হাতে কাম নাই তাই বইয়া বইয়া সব জাল হারতে আছি”। বরগুনা সদর উপজেলার বরইতলা এলাকার ট্রলার মাঝি জাকির জানান, “জাল ও নৌকা সবসময় মালিকের থাহে, মাছের দাম অনুপাতে জাইল্লারা টাহার ভাগ পায়, জাল নষ্ট অইয়া গেলে মালিকের ক্ষতি অইবে বেশি, তবুও জালের সেবায় বেবাক কিছু জাইল্লারই করন লাগে। কারন জালই মোগো জাইল্লাগো রিজিক।
এছাড়াও আরো কয়েকজন জেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন পরে ২৩ অক্টোবর থেকে তাদের সুতার জাল আবার ভরে উঠবে রুপালি ইলিশে। এমন স্বপ্নেই দিনরাত বিভোর এ সকল প্রান্তিক জেলেরা।
পাঠকের মন্তব্য