সোনাগাজী, ফেনী, ১০ অক্টোবর ২০১৭ ॥ উৎসবমূখর পরিবেশে ফেনীর উপকূলীয় উপজেলা সোনাগাজীর সোনাপুরে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল ২০১৭’ কর্মসূচি। ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সোনাপুর হাজী এম এস হক উচ্চ বিদ্যালয়ে সবুজ উপকূল অনুষ্ঠানে উপকূলের পড়–য়াদের প্রতি সবুজ সুরক্ষার আহবান জানান সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা।
উপকূলের পড়ুয়াদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো, সৃজনশীল মেধার বিকাশ, লেখালেখি চর্চার মাধ্যমে তথ্যে প্রবেশাধিকারসহ জীবন দক্ষতা বাড়ানো এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে উপকূল বিষয়ক সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান ‘উপকূল বাংলাদেশ’।
কর্মসূচির আওতায় ছিল রচনা লিখন, পত্র লিখন, ছবি আঁকা ও সংবাদ লিখন প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। কর্মসূচিতে বিদ্যালয়ের একদল পড়–য়া পরিবেশ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। বিদ্যালয়ে প্রকাশিত হয় দেয়াল পত্রিকা ‘বেলাভূমি’র বিশেষ সংখ্যা। কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয়ের আশাপাশে গাছের চারা রোপণ করা হয়। সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে।
‘এসো সবুজের আহ্বানে, গড়ি সবুজ উপকূল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, উপকূল সুরক্ষায় আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। উপকূল অঞ্চল বিভিন্ন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এ অঞ্চলে প্রতি বছর হানা দেয়। এইসব কারণে আজকের পড়–য়ারা ঝুঁকির মুখে আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে নানান সমস্যা। এইসব সমস্যা মোকাবেলায় আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু গাছ লাগানো নয়, এর পাশাপাশি চারপাশের পরিবেশ রক্ষায় সজাগ হতে হবে। পরিবেশ ও ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। লেখালেখির মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক তথ্য আহরণের পাশাপাশি সচেতন হয়ে উঠতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সোনাপুর হাজী এম এস হক উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ ইসমাইল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বক্তারমুন্সি শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোমমিনুল হক, আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বক্তারমুন্সি শাখার ব্যবস্থাপক মো. শাহাব উদ্দিন, ব্যাংকের অফিসার মো. আবদুল হাই, সোনাগাজী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নাজনীন সুলতানা, ফেনী প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আনোয়ার সোহেল প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে ভেন্যু বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুল হক। সূচনা বক্তব্য দেন সবুজ উপকূল ২০১৭-এর স্থানীয় সংগঠক ও আলোকিত সোনাগাজী’র সম্পাদক শেখ আব্দুল হান্নান। কর্মসূচির প্রেক্ষাপট ও উপকূলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও আয়োজক প্রতিষ্ঠান ‘উপকূল বাংলাদেশ’-এর পরিচালক উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সবুজ উপকূল ২০১৭ কর্মসূচির ব্যানার নিয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে। গাছের চারা বিতরণ ও রোপণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ শেষ হয়। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিল ভেন্যু বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মেহেরীন সুলতানা নিহা ও অস্টম শ্রেণীর নুসরাত জাহান তিশা।
কর্মসূচিতে সহ-আয়োজক হিসাবে থাকছে উপকূলের স্কুল পড়ুয়াদের সংগঠণ আলোকযাত্রা দল, আইটি পার্টনার হিসাবে থাকছে ডটসিলিকন, মিডিয়া পার্টনার হিসাবে থাকছে এটিএন বাংলা ও দৈনিক সমকাল।
এবার উপকূলের ১৪টি জেলার ১৯টি উপজেলার ২০টি স্থানে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। পাইকগাছায় তৃতীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হলো। এরআগে এবার সাতক্ষীরার শ্যানগরের মুন্সীগঞ্জ ও গাবুরায় পৃথক দু’টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এবার
এবার সমগ্র উপকূলে ২০টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে ১০০ স্কুলের প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এ নিয়ে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা পেয়েছে পরিবেশ সচেতনতার বার্তা, যা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে কাজে লাগছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে সবুজ উপকূল কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৫ সালে ১০টি জেলার ১৩টি উপজেলার ৪০টি স্কুলের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে ১৪টি জেলার ২৫টি উপজেলার ১১৬টি স্কুলের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এবারের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে তিন বছরে উপকূলের ২৫৬টি স্কুলে ১ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থী সবুজ উপকূল কর্মসূচির আওতায় আসবে।
পাঠকের মন্তব্য