নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল বয়ারচর, নলেরচর ও নঙ্গলিয়ারচরসহ উত্তরাঞ্চলে যাদের শ্রমে ঘামে গড়ে উঠেছে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ জনপদেরই কিছু মানুষ প্রায় বিনাবেতনে শিশুদের শিক্ষা দিয়ে আসছেন। অথচ এই মানুষগুলোই এখন বঞ্চিত হচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজসে সরকারি কর্তা ব্যক্তিদের কলমের খোঁচায়।
যুগ যুগ ধরে শ্রম দিয়ে আসা এসব শিক্ষককে বাদ দিয়ে রাতারাতি নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে জাতীয়করণের জন্য মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হচ্ছে। বিনিময়ে চলছে লাখো টাকার ঘুষ বাণিজ্য। উপজেলা শিক্ষা অফিস এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও এর জন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জাতীয়করণের তালিকায় থাকা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ঠিকানায় ব্যবহৃত অনেক বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্বই আসলে নেই। তবু শিক্ষা অফিসের ফাইলে রয়েছে এসব বিদ্যালয়ের নাম, রয়েছে শিক্ষকের তালিকাও। শুধু অস্তিত্বহীন বিদ্যালয় বা ভুয়া শিক্ষকই নয়, সাজানো হয়েছে ভুয়া শিক্ষার্থীও। তেমনি এক বঞ্চিত শিক্ষিকার নাম রাশেদা বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২নং চানন্দী ইউনিয়ন পশ্চিম আর্দশ গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে রাশেদা বেগম পিং - নূরুল কবির ২৫/০২/২০০৮ইং নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ০৫/০৩/২০০৮ ইং তারিখে যোগদান করে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। অথচ উপজেলার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ম্যানিজিং কমিটি ৪ জন শিক্ষকের নাম জাতীয়করণের জন্য সুপারিশ করেন।
তার মধ্যে রাশেদা বেগম এর নাম বাদ দিয়ে শ্রাবণী রায়কে ০৬/০৩/২০১২ ইং বেআইনি এবং ভূয়া চাকরীতে যোগদান দেখান।স্কুল হাজিরা খাতা দেখে জানা যায়, কোন দিন স্কুলে আসে নাই এবং ক্লাস ও করেন নাই। কিন্তু রাশেদা বেগম ০৫/০৩/২০০৮ ইং থেকে যথারীতি আজ পর্যন্ত ক্লাস করে আসছে।এছাড়া অভিযোগ করেন স্হানীয় লোকজন জনতা বাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে এ স্কুলের শিক্ষক থেকে মুক্তা বেগমকে সরিয়ে দিতে বিদ্যালয়ের আলমিরা ভেঙে সবকাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যায় প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রটি।
তিনি জানান, স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সেসময় তার কাছ থেকে জোরপূর্ব রিজাইন লেটার (অব্যাহতি পত্র) নিয়ে নেন। এছাড়া স্বপন উদ্দিন নামেও একজন শিক্ষক দীর্ঘ আট বছর ধরে বিদ্যালয়টিতে ক্লাস নিয়েছিলেন। এদের কারো নাম এখন বিদ্যালয়ের ফাইলে নেই।
এই বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও আরো অন্তত ১০টি বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে সেখানে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দরবেশ বাজার হাজী গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিনুর আক্তারের নাম বাদ দিয়ে ফাহিমা আক্তারের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ফাইল চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বেসরকারি বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা আসার পর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন দাস তাদের নাম বাদ দিয়ে ভুয়া ম্যানেজিং কমিটি সাজিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেন। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি তৃতীয় পর্যায়ে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য হাতিয়া উপজেলা ৩৯টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে ৩৯ লক্ষ টাকা তুলেন স্কু্ল ম্যানিজিং কমিটি। অনেক লিগ্যাল শিক্ষক থেকে টাকা নিয়ে তাদের না জানিয়ে ভূয়া শিক্ষকচূড়ান্ত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন আমার কাছে লিখিত অভিযোগ আসতে হবে। লিখিত না আসলে আমি তো কিছুই করতে পারবো না। লিখিত আসলে আমি তদন্ত করে দেখবো আসলে সে কি মূল স্কুলে আছে না কি ভূয়া শিক্ষক।
পাঠকের মন্তব্য