বাংলাদেশ ও এশিয়ার ১৪টি দেশের পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের নিয়ে ঢাকায় রোববার একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের অভিজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময়।
এই সম্মেলনে ইন্টারপোলের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছেন।
কিন্তু অনেকেরই নজর কেড়েছে এই সম্মেলনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের প্রতিনিধির যোগদান।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি একেএম শহিদুর রহমান বলছেন, “আমাদের একটা অবজার্ভেশন হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী সোশ্যাল বিভিন্ন মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। এজন্যই আমরা তাদেরকে নিয়ে আসছি।”
“সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যে সমস্ত অপরাধ সংগঠিত করা যায়, সব বিষয়েই আলোচনা হবে এখানে। তারা শুনবে, তাদের কাছ থেকেও শুনব। দেখা যাক কি হয় এখান থেকে”।
বিক্রম লাংঘে নামক এই প্রতিনিধি ফেসবুকের ব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলে জানা যাচ্ছে।
রবিবার সকালে সম্মেলন উদ্বোধনের পর এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান একেএম শহিদুল হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রচার বন্ধ করার বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে মি. লাংঘের সঙ্গে পুলিশের আলাদা একটি বৈঠকও হবে।
এমন সময়ে পুলিশের এই সম্মেলনটি হচ্ছে, যখন রবিবারই বাংলাদেশের পত্রিকায় খবর এসেছে যে, ফেসবুকে অশ্লীল ছবি প্রকাশিত হবার পর অপমানে শনিবার যশোরের এক কিশোরী আত্মহনন করেছে।
এ ধরণের খবর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়।
আবার ‘আইসিটি অ্যাক্ট’ নামে নতুন একটি আইনের বলে নানা জনকে নানা জনের বিরুদ্ধে অভিযোগও করতে দেখা যায়।
বাংলাদেশেরই একজন তারকা ক্রিকেটারকে সম্প্রতি তার এক বান্ধবীর করা এ ধরণের অভিযোগের কারণে কারাগারে যেতে হয়েছে।
দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখালেখি করার কারণেও কারাবরণ করতে হয়েছে অনেককে।
তার উপর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ ছড়ানোর অভিযোগ তো রয়েছেই।
এ ধরণের অপরাধ মোকাবেলায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত?
ক্রাইম রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস ফাউন্ডেশন (ক্র্যাফ) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব কাজী মিনহার মোহসিন উদ্দিন বলছেন, অনেক সময়ই স্থানীয় কোন থানায় এ ধরণের অভিযোগ নিয়ে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বুঝতেই পারেন না সাইবার ক্রাইম জিনিসটা কি।
তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একদম তৃণমূল পর্যায়ে সাইবার অপরাধ বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবার গুরুত্ব উল্লেখ করছিলেন।
তরুণ এই সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যারা ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যেও একটি বড় অংশ সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে অজ্ঞ, যার কারণে প্রায়ই বিপদে পড়ছেন তারা।
“ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে ভিক্টিমেরও দোষ থাকে। তারা নিজেরাই সব কিছুকে ইজি মনে করার কারণেই কিন্তু পরে একটা সিচুয়েশনে পড়ে যায়”, বলছিলেন মি. মোহসিন উদ্দিন।
পাঠকের মন্তব্য