জাতিসংঘ তাদের সর্বশেষ হিসেবে বলছে, গত দু সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান এই তথ্য জানিয়েছেন।
মাত্র দুদিন আগেও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সর্বশেষ দফায় আসা শরণার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার বলে উল্লেখ করছিলেন।
মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে শরণার্থীর সংখ্যা এক লাখ বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভিভিয়ান ট্যান বলেন, গত দুই দিনে তারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া আরও অনেক শরণার্থীদের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের কথা তারা আগে জানতেন না।
তিনি বলেন, “সেপ্টেম্বরের ছয় ও সাত তারিখে জাতিসংঘের সব সংস্থা এবং বিভিন্ন এনজিওর একটি যৌথ দল সীমান্তের যেসব এলাকায় শরণার্থীরা এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে সেসব এলাকায় গেছে। সেসময় তারা অনেক নতুন শরণার্থী দলের সন্ধান পেয়েছেন। এসব শরণার্থীরা মূলত আছে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামে। তারা যেখানেই থাকার মতো জমি পেয়েছে, সেখানেই থাকছে।”
ভিভিয়ান ট্যান বলেন, শরণার্থীদের এই সংখ্যাটি অনুমান নির্ভর, প্রকৃত সংখ্যা নয়।
এই যে দুসপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ শরণার্থী এসে পৌঁছেছে, এরা কোথায় কিভাবে আছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ভিভিয়ান ট্যান বলেন, শরণার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ কারণেই শরণার্থীদের সঠিক হিসেব বলা যাচ্ছে না। এদের অনেকে আছে বিভিন্ন গ্রামে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে।
শরণার্থীদের যেভাবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা আশ্রয় দিচ্ছেন তার প্রশংসা করে ভিভিয়ান ট্যান বলেন, তারা যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিচ্ছেন।
তিনি জানান, শরণার্থীরা সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে দুটি শিবির নওয়াপাড়া এবং কুতুপালং এ। কিন্তু এই দুটি শিবিরে আর জায়গা নেই। এছাড়া বালুখালি এবং লেডায় অনেক নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। শরণার্থীরা রাস্তার দুপাশে যেখানেই খালি জায়গা পেয়েছে, সেখানেই তাবু খাটিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
যে হারে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে ঢুকছে, শেষ পর্যন্ত তাদের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে?
ভিভিয়ান ট্যান বলেন, এটাই এখন সবার প্রশ্ন। মাত্র কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে জাতিসংঘের সব সংস্থা মিলে তিন লাখ শরণার্থী আসতে পারে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। কিন্তু আজকেই শরণার্থীর যে নতুন সংখ্যা আমরা পেয়েছি, খুব দ্রুতই আমরা তিন লাখে পৌঁছে যাব। আরও কত নতুন শরণার্থী আসতে পারে, তা এখন আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু যেটা পরিস্কার, আমাদের মানবিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এই শরণার্থীরা নিদারুণ খারাপ অবস্থায় আছে।
শরণার্থীরা কি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকেই আসছে, নাকি সব জায়গা থেকেই এরা পালিয়ে আসছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ভিভিয়ান ট্যান বলেন, আমরা এখনো পর্যন্ত শরণার্থীদের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পারিনি। কারণ এখন আমাদের মনোযোগ পুরোপুরি মানুষের জীবন বাঁচানোর মতো জরুরী বিষয়গুলোর দিকে নিবদ্ধ।
তবে গত দুদিনে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয় বৈঠক হয়েছিল, সেখানে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল।
আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, উত্তর রাখাইনের কোন জায়গা থেকে আপনারা এসেছেন ? তাদের উত্তর ছিল মিশ্র। কেউ বলেছে মংডু, কেউ বুথিডং, কেউ রাথিডং এর কথা বলেছে। অনেকে অন্য জায়গার নাম বলেছে।
পাঠকের মন্তব্য