ঈদুল আজহার দিন শেষ বিকেলে কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে। আগত এসব দর্শনার্থীর বেশির ভাগই বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠিসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের। দিন শেষে ক্লান্তির অবসাদ মেটাতে এঁরা ভিড় করেছেন কুয়াকাটায়। তাই ঈদের দিন কুয়াকাটার পড়ন্ত বিকেলটি শিশু-কিশোরদের হই-হুল্লোড়, নবীন-প্রবীণের পদচারণে ছিল সরগরম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত ঈদের পরদিন রোববার থেকে ঢাকাসহ দেশের দূরবর্তী জেলার পর্যটকেরা কুয়াকাটায় আসবেন। কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলগুলো সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
এদিকে ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় ব্যাপক পর্যটকের আগমনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন এবং কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বললেন, কুয়াকাটায় ৫২টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। প্রতিটি হোটেলই পর্যটকদের সেবা দিতে তৈরি হয়ে আছে। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত হোটেল-মোটেলগুলোতে পর্যটক-দর্শনার্থীদের চাপ বেশি থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
কুয়াকাটা ঘুরে দেখা গেছে, জিরো পয়েন্ট, বন বিভাগের জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, শুঁটকি পল্লি, মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধমন্দির, রাখাইন মহিলা মার্কেটসহ আকর্ষণীয় সব পয়েন্টেই উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দর্শনার্থীদের আগমনের কারণে খাবার হোটেল, চায়ের দোকান, শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলোতে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। সৈকতের পাড়ের ফুচকার দোকান, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ফ্রাই বিক্রির দোকানগুলোতেও বিক্রি ভালো হয়েছে। অতিরিক্ত মূল্য আদায় করে নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। সাইফুর রহমান নামের একজন বললেন, ‘৬০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ফ্রাইয়ের মূল্য রাখা হয়েছে ৫০০ টাকা। যা অতিরিক্ত শুধু নয়, অনেকটা বাড়াবাড়িও বটে।’
কুয়াকাটার খাবার হোটেল ব্যবসায়ী সাবের আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত মাত্র ২২ কিলোমিটার। সড়ক পথে তিনটি নদীতে ফেরি পারাপার ছিল এক সময় চরম ভোগান্তির। সেখানে ফেরির পরিবর্তে সেতু হয়ে গেছে। এখন মাত্র ২৫ মিনিটে এ পথটুকু পার হওয়া যায়। যার কারণে গত দুই বছর ধরে বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
তবে কুয়াকাটার সবচেয়ে অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলার মহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন চোকদার সড়ক ব্যবস্থার দুরবস্থা নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। তিনি বলেন, ‘কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটায় যেতে সড়ক যোগাযোগ সহজ হয়েছে এটা ঠিক, তবে এ অংশের সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে পাখিমারা থেকে মহিপুর মৎস্য বন্দর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার সড়কের পুরো অংশেই খানাখন্দে ভরপুর।’
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পর্যটকদের ব্যাপক আগমনের কারণে কুয়াকাটা সৈকতসহ পার্শ্ববর্তী স্পটগুলোতে যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সৈকতে গোসল করতে নেমে কেউ যাতে বিপদে না পড়ে, সে জন্য ওয়াটার বাইকসহ পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাঠকের মন্তব্য