পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের মোট ২৭টি জেলার প্রায় ৫লক্ষাধিক পরিবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। পানির কবলে পড়ে ঝরেছে ৯৪টি তাজা প্রাণ! গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ মৃত্যুর মিছিলে একের পর এক যোগ হচ্ছে গৃহপালিত পশু- পাখি। পর্যাপ্ত ত্রাণ নিয়ে হাহাকার চলছে উত্তারঞ্চলীয় এই বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। রাত যায় দিন আসে, তবুও কমছেনা বন্যার পানি। ঠিক সে সময়ে ওই উত্তরাঞ্চলেরবন্যার পানি এখন গড়াচ্ছে দেশের দক্ষিনাঞ্চলেরর উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর দিকে।
শুরুতেই বন্যার পানি আঘাত হানতে শুরু করেছে লক্ষ্মীপুরের নিম্মাঞ্চলে। এখনো আমাবশ্যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে কয়েকদিন। কিন্তু আমাবশ্যা না আসতেই মেঘনার পানি যেন ফুঁসে উঠেছে। জেলার প্রত্যন্ত জনপদের জোয়ারের অস্বাভাবিক পানিতে ভাসছে মানুষের ঘর-বাড়ি, রাস্তা- ঘাটসহ জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে জেলা সদরের মজু চৌধুরীর হাট, চর রমনী মোহন, টুমচরের কালিরচর গ্রাম, চর উভুতি, কমলনগরের চর কালকিনি, চর মার্টিন, পাটোয়ারীরহাট, সাহেবের হাট, চর লরেন্স, চর ফলকন, রামগতির বিবিরহাট,সেবাগ্রাম, খন্দকার পাড়া, চর আলেকজান্ডার, আদর্শ গ্রাম, রামগতি বাজার এলাকাসহ প্রান্তিকের লক্ষাধিক মানুষ এখনো মেঘনার পানিতে বন্দি।
রোববার বেলা ৩টার দিকে কমলনগরের মেঘনার কূলে ঘুরলে চোখে পড়ে, মেঘনার জোয়ারের তীব্র স্রোত অমজবুত রাস্তার উপর দিয়ে গড়াচ্ছে। নিমাঞ্চলের অনেক বাড়ির অথৈ পানির মধ্যে ডুবে আছে ঘর-বাড়িসহ মানুষজন। বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরা কোমলমতি শিশুদের দেখা যায়পানিতে ভিজে ভিজে পথ পার হচ্ছে। চিকন, নিচু জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো এখন পানির গভীরে তলিয়ে আছে। দেখা যায় কয়েকজন কিশোর ডুবে ডুবে পথ এগুচ্ছেন।
অনেক এলাকা বন্যা নিয়ন্ত্রক বেড়িবাঁধের আওতায় না থাকায় খুব দ্রুতই পানি মানুষকে তাড়িয়ে ফিরছে। এ বিষয়ে অস্বাভাবিক পানির কবলেপড়া মৎস্যচাষী মাকছুদুর রহমান কিরণ বলেন, “গত বছরের এমন সময় আমি বন্যায় প্রায় ৬০হাজারেরও বেশি টাকা মাছ হারিয়েছি। এবারো মাছ নিয়ে বেশ দুঃচিন্তায় রয়েছি। কারণ, মাছ হারানোর পর ভাগ্যে কোন ক্ষতিপূরণ মিলেনি।”
মেঘনার তীরবর্তী গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও বৃহত্তর নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় মতিরহাট ইলিশ ঘাটের সভাপতি, তরুণ উদ্যমী মেহেদী হাসান লিটন বলছিলেন, “এই প্রত্যন্ত অঞ্চলকে বেড়িবাঁধের আওতায় আনার জন্য তেমন কোন প্রকল্প আসছেনা, ফলে প্রতিনিয়ত জোয়ারের নিম্মচাপে তলিয়ে যায়
গ্রামের পর। সে ক্ষেত্রে, দেখা দিলে অবস্থা যে কত মারাত্মক রুপ ধারণ তা অত্যন্ত সংকটময় পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় আমাদের। তাছাড়া, তীব্র স্রোতে সম্প্রতি এলাকার বেশ কয়েকটি সেতু তলিয়ে গেছে, এগুলো ভরাট করা ছাড়া কোন উপায় নেই। বন্যা নিয়ন্ত্রক বাঁধগুলো আরো মজবুত
করা জরুরী।”
এবিষয়ে জেলা তথ্য অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে কথা বলে একুশ শতক প্রতিবেদক। তিনি একুশ শতকে জানান, “আমরা এর আগেও বন্যা
এবং জলাবদ্ধতা নিয়ে বেশ কয়েকবার মতবিনিময় সভা করেছি। বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভালো না হলে আমাদের জেলা প্রশাসন আবার জরুরী মিটিং এ বসতে পারে।”
পাঠকের মন্তব্য