উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাইবান্ধার সবকটা নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তিনটি উপজেলায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এখনও ঝুঁকির মধ্যে বেশ কয়েকটি বাঁধ।
এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য জানানো এবং তথ্য সহায়তার মাধ্যমে বন্যা কবলিত ও শংকাগ্রস্থদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার শুরু করেছে কমিউনিটি রেডিও সারাবেলা ৯৮.৮ এফএম। মঙ্গলবার রাত ১১টায় নিয়মিত সম্প্রচার সময় সমাপ্ত হলেও সম্প্রচার অব্যাহত রাখে রেডিওটি। শুরু হয় ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার।
‘শহরের ডেভিড কোম্পানী পাড়াস্থ শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে শহরে পানি ঢুকছে’ - এমন গুজবে যখন শহরবাসী আতংকিত ঠিক তখনই ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি তথ্য ও সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করে কমিউনিটির মানুষকে সঠিক তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে সক্ষম হয় যে বাঁধ অক্ষত আছে। ভয়ের কোন কারণ নেই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে রেডিও সারাবেলা। পাশাপাশি খোলা হয়েছে একটি হেল্প ডেস্ক। যেখানে ০১৭১৩৪৮৪৪৬৫-এই নম্বরে ফোন করে বন্যা সম্পর্কিত তথ্য জানতে ও জানাতে পারছেন সর্বস্তরের মানুষ। ফোন, ফেসবুক ও এসএমএস-এর মাধ্যমে শতাধিক মানুষ রেডিও সারাবেলার কাছে বন্যার খবর জানানোর অনুরোধ পাঠান। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সেসব তথ্য সম্প্রচার করে রেডিও সারাবেলা। স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও ভুক্তভোগীদের কথা সম্প্রচার করছে রেডিওটি। আশ্রয়কেন্দ্রসমূহের ঠিকানা ও ফোন নম্বরও সরবরাহ করছে রেডিও সারাবেলা। সিদ্ধার্থ রায় নামে একজন শ্রোতা রেডিও সারাবেলার কাছে প্রশ্ন করেন- ‘বাঁধের কি অবস্থা বললে ভাল হতো। একদম আপডেট থাকলে বলবেন, ডেভিড কোম্পানী পাড়ার সোনালী বাঁধের অবস্থা জানতে চাই।’ তার প্রশ্নের জবাবে, ডেভিড কোম্পানী পাড়ার সোনালী বাঁধ থেকে সরাসরি যুক্ত হোন সারাবেলার সম্পচার কর্মী নুরুননবী রাসেল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুবুর রহমানের সাক্ষাৎকারসহ ওই শ্রোতার প্রশ্নের উত্তর জানান তিনি। এভাবে শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সবশেষ তথ্য প্রদান করছে রেডিও সারাবেলা। পাশাপাশি এ সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক ধারাবাহিক বার্তাও প্রদান করছে রেডিওটি। রেডিও সারাবেলার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জিসুন মাহবুব নামে এক শ্রোতা ফেসবুক মন্তব্যে লিখেছেন, ‘বন্যার পরিস্থিতি আপডেট দেয়াটা খুব ভাল হচ্ছে। এভাবে সব সময় আমাদের পাশে থাকবেন।’ শুধু জিসুন মাহবুবই নন আরো অনেক শ্রোতা তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন এভাবে।
সারাবেলার স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজ ফারুক বলেন, কমিউনিটির মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২৪ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রচারের উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। কমিউনিটির মানুষ, স্বেচ্ছাসেবক ও রেডিও কর্মীদের নিয়ে বন্যা সম্পর্কিত করণীয় ও তথ্য দেয়া হচ্ছে। যা নির্মাণ ও সম্প্রচারে অংশগ্রহণ করছে এই কমিউনিটির মানুষ। এতে করে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি। ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার কতদিন পর্যন্ত চলবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ ফারুক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রেডিও সারাবেলা ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার অব্যাহত রাখবে।’
উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রেডিও সারাবেলা গত বছরের ১৪ এপ্রিল সম্প্রচারে আসে। বর্তমানে রেডিওটিতে ১১জন কর্মী, ৪৯ জন স্বেচ্ছাসেবক, ৫জন দলিত কমিউনিটির ফেলো ও ৫০ জন শিশু কাজ করছে। প্রথম দিন থেকে রেডিওটি প্রতিদিন সকাল ৭টা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬ ঘন্টা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
পাঠকের মন্তব্য