দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভের মাধ্যমে সুন্দরবনবিনাশী সকল প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। আজ ১১ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশবাসিসহ সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ সুন্দরবন রক্ষায় এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানালেও স্বার্থান্বেষী মহল ও সরকার এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনঢ় রয়েছে। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে তার অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করা হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও সাইফুল হক। মোঃ শাহ আলম, বজলুর রশিদ ফিরোজ, জোনায়েদ সাকী, মোশাররফ হোসেন নান্নু, মানস নন্দী, শহীদুল ইসলাম সবুজ, নাসির উদ্দিন নসু, মাঈনুদ্দীন চৌধুরী লিটন, শামসুল আলম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, ইউনেস্কো বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত করে বলেছে, এমনিতে সুন্দরবনের সুরক্ষা নেই। এরপর রামপাল প্রকল্প হলে এটি ধ্বংস হবে। এইসব তথ্য-উপাত্তের কোন হেরফের হয়নি। বরং দেশের ও বিশ্বের বিশেষজ্ঞবৃন্দ আরো নতুন তথ্য-উপাত্ত যোগ করে এটা প্রমাণ করে চলেছেন যে, কয়লাভিত্তিক এই প্রকল্প অনিবার্যভাবে মানুষের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ও সুন্দরবন ধ্বংস করবে।
তিনি বলেন, এবার ওয়াল্ড হেরিটেজ কমিটির মিটিং শেষ হওয়ার আগে সরকার বিকৃত তথ্য-প্রচার করে যে উল্লাশ করলো তা বিস্ময়কর। দেশের সম্পদ-মানুষ-প্রকৃতি ধ্বংস হবে এমন প্রকল্প রক্ষা না করে ধ্বংসের সরকারের উল্লাস জনগণের পক্ষের কোন সরকার করতে পারে না।
তিনি অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, এটি না হলে ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, স্বল্প খরচে দেশের জ্বালানী সমস্যার সমাধানে বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরার জন্যে আগামী ২২ জুলাই ঢাকায় বিকল্প মহাপরিকল্পনা উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা হবে সরকারের পশ্চাৎমুখী লুটপাটের মহাপরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে অগ্রসর ও প্রগতিশীল মহাপরিকল্পনা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের কথাকে সামনে রেখে সুন্দরবনবিধ্বংসী যে প্রকল্প করা হচ্ছে তা মোটেও প্রয়োজন নেই। ওই অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প রয়েছে। এখন শিল্প কল-কারখানা না থাকায় প্রয়োজনের ২১টি জেলায় সারা দেশের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা কম। এটা বাড়াতে হবে। এজন্য শিল্পান্নোয়নসহ পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের বিকল্প পথ রয়েছে। সরকার এদিকে নজর না দিয়ে সুন্দরবনের চারপাশ ঘিরে লুটেরা দখলের সুযোগ দিতে এই প্রকল্প করতে চাইছে। সম্প্রতি পত্রিকার খবরে দেশবাসী জেনেছে সরকারের নেতা-পাতিনেতারা এসব দখলদারিত্বের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। নেতৃবৃন্দ সুন্দরবন রক্ষায় ওই অঞ্চলে অনুমতিবিহীন ও অপ্রয়োজনীয় ও সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর সব প্রকল্প বন্ধের আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আগামী ২৫ জুলাই সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলার ১০০ কিলোমিটার ব্যাপী জায়গায় সভা সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
পাঠকের মন্তব্য