উপকূলের পড়ুয়াদের নিয়ে ব্যতিক্রমীধারার পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচি ‘‘সবুজ উপকূল’’ বদলে দিয়েছে স্কুল ক্যাম্পাস। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও ফজুমিয়ারহাট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ক্যাম্পাস তারই দৃষ্টান্ত বহন করছে। যেখানে কোন গাছপালাই ছিল না, সেখানে এখন সবুজের সমারোহ। কর্মসূচি উপলক্ষে লাগানো গাছের চারা মাথা তুলছে আকাশের দিকে।
“সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি’’ নিয়ে এই দু’টি প্রতিষ্ঠানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘‘সবুজ উপকূল’’ কর্মসূচি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে উপকূল জুড়ে বাস্তবায়িত এই কর্মসূচির আওতায় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টোর সামনে লাগানো হয় বিভিন্ন জাতের গাছের চারা। ২০১৫ সালে কর্মসূচির আওতায় উল্লেখিত দু’টো প্রতিষ্ঠানেই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ফার্স্ট সিকিউরিটিইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রীণ ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ।
কর্মসূচির আওতায় ছিল গাছের চারা রোপণ। আরও ছিল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সৃজনশীল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যারমধ্যে ছিলো, উপকূলের সবুজ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, পত্র লিখন, সংবাদ লিখন, কবিতা লিখন, ছবি আঁকা। এছাড়াও অনুষ্ঠানের অংশহিসেবে ছিলো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, উপস্থিত বক্তৃতা, কোরআনতেলওয়াত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে উপকূলের সবুজ সুরক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানের পর দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে লাগানো হয় সবুজের চারা। সবুজ উপকূলের ছোঁয়ায় পড়ুয়ারা এখন নিজেরাই উপকূলের সবুজ সুরক্ষায় সচেতন। নিজেদের বিদ্যালয়ে লাগানো গাছগুলো নিজেরাই পরিচর্যা করে টিকিয়ে রেখেছে। সবুজ গাছগুলো এখন বিদ্যালয় আঙ্গিনাকে সবুজ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন নিজেরাই উপকূলের সবুজ সুরক্ষায় সচেতন। নিজের টিফিনের টাকা খরচ না করে গাছ কিনে বাড়ির আঙ্গিনায় লাগায়, সবুজকে ভালোবাসে, সবুজের সুরক্ষা করে।
কমলনগরের দু’টি শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাস পরিদর্শন করলে নজরে পড়ে “সবুজ উপকূল” কর্মসূচির ছোঁয়ায় লাগানো গাছগুলোর এক একটি এখন মানুষের মাথার উপরে উঠে গেছে। একটু গরমে এই গাছগুলোর ছায়াতলে আশ্রয় নেয় মানুষজন। যার প্রমাণ তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড় স্কুল মাঠে ক্রিকেট খেলে। কয়েকটি গাছ অনেক বড় হয়ে গেছে। নিচে জন্মেছে ঘাস। ফলে গাছের নিচে বসতে অসুবিধা নেই। এই কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, থানার একজন এসআই ও প্রাক্তন পড়ুয়ারাও কর্মসূচির পর গাছ লাগিয়েছে। এখনক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য নজর কাড়ানো।
সবুজ উপকূল কর্মসূচির ছোঁয়ায় সবুজ হয়ে উঠছে তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সবুজ উপকূল কর্মসূচির ছোঁয়ায় সবুজ হয়ে উঠছে তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস
একই চিত্র ফজু মিয়ারহাট উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে। বেড়িবাঁধ ঘেঁষে গেছে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ। এর সঙ্গেই “সবুজউপকূল” এর ছোঁয়ায় লাগানো গাছ। গাছগুলো এখন আকাশে উঁকি দিচ্ছে, ক্যাম্পাসকে মুগ্ধ করেছে।
কর্মসূচির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়সল আহমেদ রতন এ সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক “সবুজ উপকূল” অনুষ্ঠানটিতে আমি অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছি। অনুষ্ঠানের কার্যক্রমগুলোতে আমি মুগ্ধ। এধরণের উপকূলের সব জায়গায় ব্যাপক বিস্তৃতির মধ্যে করা দরকার। এতে করে মানুষ সচেতন হবে, দুর্যোগের কড়াল গ্রাস থেকে নিরাপদ থাকবে উপকূল।
বাংলাদেশের পথিকৃত উপকূল সাংবাদিক এবং উপকূল অঞ্চলে ‘‘উপকূল বন্ধু’’ হিসাবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মন্টু’র হাত ধরে উপকূল জুড়ে চলছে ‘‘সবুজ উপকূল’’ নামের কর্মসূচি। যার পৃষ্ঠপোষক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন রফিকুল ইসলাম মন্টু।
খবরের খোঁজে উপকূলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়ুয়াদের নিয়ে দেয়াল পত্রিকা “বেলাভূমি” প্রকাশ করে আসছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। এতে পড়ুয়াদের সৃজনশীল মেধার বিকাশ ঘটছে। আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছে তারা। যা উপকূলকে এগিয়ে নিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। বিষয়টি নজরে আসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় “সবুজ উপকূল’’ কর্মসূচি। ২০১৫ সালে উপকূলের ১৫টি স্থানে এবং ২০১৬ সালে ২৬টি স্থানে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সবুজ উপকূল কর্মসূচিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, দুর্যোগের আঘাতে উপকূলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। উপকূলের সবুজ সম্পর্কে পড়ুয়ারা মোটেও সচেতন নয়। ওদের সচেতন করতে পারলে উপকূলে বাঁচবে, সবুজ বাঁচবে। দুর্যোগের কবল থেকে মানুষ বাঁচবে। আশারাখি, “সবুজ উপকূল” কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে উপকূলের মানুষের জীবন অনেকটাই নিরাপদ হবে।
পাঠকের মন্তব্য