ইস, যদি পান্ডিয়া থাকতেন!
হার্দিক পান্ডিয়া থাকলে কী হতো, এ নিয়ে ক্রিকেট রোমান্টিকেরা দিবাস্বপ্ন দেখতেই পারেন। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা হলো, ভারত ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে ইনিংসের নবম ওভারেই। যখন মোহাম্মদ আমিরের অবিশ্বাস্য এক স্পেলের তৃতীয় শিকার হয়ে ফিরে গেলেন শিখর ধাওয়ান। প্রথমবারের মতো ভারত-পাকিস্তান ফাইনালে মুখোমুখি হলো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে। স্বপ্নের ফাইনাল বলা হচ্ছিল যাকে। একপেশে ফাইনাল হওয়ার ভয়ও ছিল। কিন্তু সেটা সত্যি হলো। পাকিস্তানের কারণেই! পাকিস্তান যে দাঁড়াতেই দিল না ভারতকে!
অসহায় আত্মসমর্পণ করল ভারত। পাকিস্তানের কাছে ১৮০ রানের রেকর্ড ব্যবধান হেরেছে টুর্নামেন্টের ফেবারিটরা। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতে নিল পাকিস্তান। এই জয়ে ট্রেবল পূর্ণ হলো তাদের। এর আগে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ, ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি জিতেছিল তারা। এবার জিতলে আইসিসের আরেকটি টুর্নামেন্ট। আইসিসির তিন টুর্নামেন্টের সবগুলো জেতার কীর্তি আছে কেবল ভারত ও শ্রীলঙ্কার।
পাকিস্তান ৩৩৮ রান করার পর ঘুরে ফিরে আসছিল ২০০৩ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ। সেবার অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯ রান করার পরই ম্যাচের ফল নিয়ে প্রশ্ন মুছে গিয়েছিল। সে যুগে যে অত রান তাড়া করার কথা কেউ ভাবতেও পারত না! শুধু বীরেন্দর শেবাগই একটু চেষ্টা করেছিলেন। এক প্রান্তে যা একটু চার-ছক্কা হাঁকিয়ে একটু আগ্রহ জন্মাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই শেবাগ রানআউট হয়ে যেতে সব আগ্রহে জল পড়েছিল। অস্ট্রেলিয়াও অনায়াস জয়ে মাঠ ছেড়েছে।
আজও ম্যাচ নিয়ে কিছুটা আগ্রহ জন্মাচ্ছিলেন পান্ডিয়া। ম্যাচের ফল নিয়ে নয়, ব্যবধান কত কমিয়ে আনতে পারেন কিংবা দ্রুততম সেঞ্চুরির ভারতীয় রেকর্ড গড়তে পারেন কি না, তা নিয়ে! ৩৩৯ রানের লক্ষ্যে যে কোমর ভেঙে পড়েছিল ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ। পান্ডিয়া উইকেটে আসার আগেই যে ভারতের স্কোর ৫ উইকেটে ৫৪! ইনিংসের তখন সবেমাত্র ১৪ ওভার চলছে!
ইনিংসের তৃতীয় বলে রোহিত শর্মাকে এলবিডব্লু করলেন আমির। লেগ স্টাম্পে পড়া বলটি কখন যে তাঁর প্যাডে আঘাত হানল টেরই পেলেন না রোহিত। শূন্য রানেই প্রথম উইকেট হারাল ভারত। পরের ওভারেই আউট বিরাট কোহলি। ওভারের দ্বিতীয় বলে দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গার। পরের বলটি উল্টো দিকে যাওয়ায়, কোহলির ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গেল। সে ক্যাচ ফেলে দিলেন আজহার আলী! রাগে দুঃখে গজরাতে গজরাতে আরেকটি আগুনের গোলা আমিরের। আবারও ব্যাটের কানা লেগে বল ছুটল পয়েন্টে। শাদাব খানের হাতে জমা পড়ল সে বল। আর আগুন ঝড়ানো সে স্পেল পূর্ণতা পেল নবম ওভারে। পাল্টা আক্রমণ করতে থাকা ধাওয়ানকে দারুণ এক আউট সুইঙ্গারে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের ক্যাচ বানালেন। আর ঠিক ৫৪ রানেই ফিরেছেন যুবরাজ সিং ও মহেন্দ্র সিং ধোনি। ইনিংসের এক-তৃতীয়াংশ পেরোনোর আগ থেকেই ক্ষণগণনা শুরু হলো ভারতের হারের!
৭২ রানে কেদার যাদব আউট হওয়ার পর দর্শকেরা আনন্দের খোরাক পেলেন। পান্ডিয়ার ধুন্ধুমার ব্যাটিং এনে দিয়েছিলে সে উপলক্ষ। রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ৯.৩ ওভারেই ৮০ রানের জুটিতে অসম্ভব এক স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন পান্ডিয়া। একের পর এক ছক্কায় গ্যালারি মাতাচ্ছিলেন আর একটু করে দীর্ঘশ্বাস ছড়াচ্ছিলেন, যদি এটা শুরুতে কেউ দেখাতে পারতেন! কিন্তু সেটাও খুব বেশিক্ষণ উপভোগ করা যায়নি, জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট পান্ডিয়া। ঠিক ২০০৩ সালের শেবাগের মতোই! ৪৩ বলে চার চার ও ছয় ছক্কার ইনিংসটি থেমে গেল ৭৬ রানে। দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হয়ে।
১৫২ রানে পান্ডিয়া ফেরার পর দীর্ঘ হয়নি ভারতের ইনিংস। ৬ রানে শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রানেই অলআউট ভারত। চার দশকেরও বেশি সময়ে পাকিস্তানের কাছে সর্বোচ্চ ১৫৯ রানে হারার রেকর্ড ছিল ভারতের। সে রেকর্ডকে নতুন করে লেখার জন্য বড় ভুল দিনই বেছে নিয়েছিল ভারত!
এর আগে পাকিস্তান রানের পাহাড় গড়ার ভিত্তি পেয়েছে ফখর জামানের ব্যাটে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেতে একটি ফাইনালের অপেক্ষাতেই ছিলেন জামান (১১৪)। ভাগ্য বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এ তথ্যও ১০৬ বলের ইনিংসটির গুরুত্ব কমাতে পারছে না। সঙ্গী হিসেবে আজহার আলী (৫৯), বাবর আজম (৪৬) ও মোহাম্মদ হাফিজকেও (৩৭ বলে ৫৭*) পেয়েছেন বলেই ভারতের বিপক্ষে একটি ফাইনাল জেতার স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে পাকিস্তান।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে যে ২৬৪ রানের বেশি তাড়া করার রেকর্ডই নেই! নতুন ইতিহাসের কীর্তি গড়ার ধারেকাছেও গেল না ভারত। বরং বরণ করে নিলো লজ্জার এক রেকর্ড!
পাঠকের মন্তব্য