সঞ্জয় মাঞ্জরেকার তাঁর এক কলামে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন, কোনো এক টেস্টে ভারতীয় জুটি উইকেটে জমে যাওয়ায় পাকিস্তানে খেলোয়াড়দের মাঠে হাল ছেড়ে দেওয়া চেহারা। এরই মধ্যে হঠাৎই একটা উইকেট পেল তারা! সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা পাল্টে গেল ভোজবাজির মতো। বাজে খেলতে থাকা দলটা হঠাৎই আবির্ভূত দুর্দান্ত চেহারায়!
পাকিস্তানের ক্রিকেট এমনই। কেউ যেটি কল্পনাও করতে পারবে না, সেটিই করে তারা চোখ কপালে তুলে দেবে! বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সাফল্য দেখুন, প্রতিটি জিতেছে সবাইকে চমকে দিয়ে। চেনা পথে হাঁটতে পাকিস্তানের যেন পছন্দ নয়!
১৯৯২ বিশ্বকাপে প্রথম পাঁচ ম্যাচের তিনটিতে হেরে শিরোপা জেতা দূরে থাক, শেষ চারে যাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল পাকিস্তানের। পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠাটাও নিজেদের হাতে ছিল না। চেয়ে থাকতে হয়েছিল অন্য দুই দলের খেলার দিকে। অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ, যাতে জিতলে পাকিস্তানের বদলে সেমিফাইনালে চলে যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অস্ট্রেলিয়াই জেতে। কোণঠাসা হয়ে পড়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে গেল। শেষ চারে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে উঠল ফাইনালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইমরান খানের পাকিস্তান কী করেছিল, নিশ্চয়ই বলার নেই।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তীরে এসে তরি ডুবেছিল পাকিস্তানের। কে জানত, এই দুঃখ ভুলতে তাদের লাগবে মাত্র দুই বছর। তা-ও আবার এমন একজনের নেতৃত্বে, যিনি কিনা সীমিত ওভারের তুলনায় টেস্টেই বেশি সফল। ইংল্যান্ডে সেবারও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে পাকিস্তানকে কেউ গোনায়ই ধরেনি। ইউনিস খানের দলের শুরুটাও হয়েছিল খুব বাজে। প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই হার। ভাগ্যিস গ্রুপে আয়ারল্যান্ড-হল্যান্ডের মতো দল ছিল! নয়তো সেমিফাইনালে ওঠাই কঠিন ছিল পাকিস্তানের। শেষ পর্যন্ত লর্ডসের ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতল পাকিস্তান।
এবার তো আর বড় বিস্ময় উপহার দিয়েছে পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেট বোদ্ধারা বলছিলেন, সম্ভবত নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল দল নিয়ে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে পাকিস্তান। এজবাস্টনে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে ১২৪ রানের হারে বাজে শুরু তাদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ওই ম্যাচের পর কোন এক জাদুর পরশে বদলে গেল দলটা। একে একে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অতীতের তুলনায় একেবারেই তারকা দ্যুতিহীন এই পাকিস্তানই উঠে গেল ফাইনালে।
আজ ওভালে নিশ্চিতভাবেই পাকিস্তান নেমেছিল ‘আন্ডারডগ’ হয়ে, ভারত সেখানে হট ফেবারিট। কিন্তু শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের জন্যই বোধ হয় নিজেদের সেরা খেলাটা জমিয়ে রেখেছিল পাকিস্তান। দুর্দান্ত ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিল নিজেদের মুঠোয়। ইংল্যান্ডে আরেকটি আইসিসির টুর্নামেন্ট জিতে পাকিস্তান প্রমাণ করল, যখন কেউ তাদের গোনায় ধরে না, তখনই জ্বলে ওঠে!
২০০৯ সালের সঙ্গে এবারের কীর্তিটা মেলানো সহজ হচ্ছে। সেবারও যে টুর্নামেন্টটা হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ২০১৯ বিশ্বকাপ ঘিরে পাকিস্তানের সমর্থকেরা কি আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে? তাহলেই সেরেছে! আশায় বুক বাঁধলে তার ফল কী হয়, সেটার বড় উদাহরণ সম্ভবত ১৯৯৯ বিশ্বকাপ। তর্কসাপেক্ষে পাকিস্তানের সবচেয়ে সেরা, সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল সেবার ফাইনালে উঠে একেবারে পানসে ফাইনাল উপহার দিয়ে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে!
পাঠকের মন্তব্য