গোপন জরিপে আগামী নির্বাচনের পরিণতি জেনে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। রোববার এক ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
রাজধানীর গুলশানের ইমান্যুয়েল সেন্টারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে এ ইফতার মাহফিল হয়।
বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘তারা (সরকার) চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে আসলে তাদের যে কী পরিণতি হবে, তারা গোপন খবর নিয়ে জেনে গেছে, তাদের অবস্থান কত নিচে। সেটা তারা বুঝে গেছে। সেজন্যই তারা নানাভাবে হয়রানি করছে যাতে বিএনপি নির্বাচনে না আসে, বিএনপির লোকজনকে কীভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়।’
‘আমি সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। এ দেশে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়,’ বলেন খালেদা জিয়া।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন বাংলাদেশে আর হবে না, হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এ দেশে নির্বাচন হবেই হবে। তবে সেটা হবে সহায়ক সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। আমরা চাই, সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।’
ব্রিটেনে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ব্রিটেনে নির্বাচন হয়ে গেছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে) তো ভয় পাননি, তিনি নির্বাচন দিয়েছেন। অথচ তিনি এবার কিছু কম পেয়েছেন সিট। তারপরও তিনি সাহস করে দিয়েছেন। সেভাবে আজকে আওয়ামী লীগের যদি সামান্যতম সাহস থাকে। কেন, তারা ভোটে হেরে যাবে এটা নয়। কত অপকর্ম তারা ১০ বছরে করেছে এর হিসাব বিএনপি যদি ছেড়েও দেয়, জনগণের কাছে প্রতিটি জিনিসের হিসাব আছে।’
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি প্রধান বলেন, ‘কয়েকটা মাস আছে। যত পারেন লুটে নেন- আপনাদের জেনারেল সেক্রেটারি (ওবায়দুল কাদের) যেভাবে বলছেন, যা পারেন লুটে নেন। বিদেশে যান, নাহলে আর বেশি সময় পাবেন না। এখন সময় চলে যাওয়ার।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০১৮ সাল দেশের জনগণের বছর হবে, গণতন্ত্রের বছর হবে, উন্নয়নের বছর হবে, শান্তির বছর হবে। কি ভাই মুক্তিযোদ্ধারা, মনে থাকবে তো। আমরাও আছি।’
ক্ষমতাসীন দলের লুটপাট-দুর্নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই ১০ বছরে তারা যত লুট করেছে, যত খেয়েছে। তাদের একেকজনের এতো ওজন বেড়েছে যে, গাড়িও তাদের টানতে পারবে কি না জানি না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এরা জানে, নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তারা পালাবার সময় তো পাবে না, এরা বেরুতে পারবে না। সেজন্য তারা একতরফা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজে স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী, তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব জায়গায় যাচ্ছেন এবং নৌকা প্রতীকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
বিএনপির ইফতার মাহফিলে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে এ সময় অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) জানে, একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কী পরিণতি হতে পারে। সেজন্য বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
বিএনপির ভিশন-২০৩০ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে, এটা নাকি তাদের থেকে নিয়েছি। এরকম ভিশন তাদের নেই, তাদের আছে চুরির চিন্তা। আমাদের ভিশনে চুরির কোনো কথা নেই। কাজেই তাদের ভিশন আর আমাদের ভিশন এক হতে পারে না, আমাদের চিন্তা ও ওদের চিন্তা এক হতে পারে না।’
মুক্তিযোদ্ধাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান খালেদা জিয়া।
ইফতার মাহফিলে মূল মঞ্চে এলডিপির সভাপতি অলি আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল আলম চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুজাউদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নুল আবেদীন, শাহ মো. আবু জাফর, হাসানউদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, মোস্তফা সাহাবুদ্দিন রেজা, মিজানুর রহমান খান, আবদুস সামাদ মোল্লা, আবদুল মান্নান, মালেক খান, আবুল কাশেম, এস এম মোস্তফা কামাল, এইচ আর সিদ্দিকী সাজু, কাজী নাসির আহমেদ, আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সাদেক, মতিউর রহমান, কামালউদ্দিন, জোয়াদুর রসুল বাবু, আবদুল মতিন প্রমুখ ইফতারে অংশ নেন।
পাঠকের মন্তব্য