গেলো ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল ৩মাস ছিলো ইলিশ ধরাতে কড়া নিষেধাজ্ঞা। লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ইলিশ শিকারে বাঁধা ছিলোচোখে পড়ার মতো। জেলেরা ইলিশ শিকার না করে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। কষ্টে ৩ মাস পার করলেন। ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা কার্ডধারী অধিকাংশ জেলেরা পাননি ভিজিএফের চাউল। এনিয়ে জেলেদের বিক্ষোভ আর জনপ্রতিনিধিদের সংবাদ সম্মেলনের মতো ঘটনাও মিড়িয়ার নজরে আসে।
ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ এখন ১মাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জেলেদের জালে তেমন পড়ছে না রুপালী ঝিলিক দেওয়া তাজা ইলিশ। এতে দিন দিনহতাশার চাপ বাড়ছে জেলে পরিবারের মাঝে। দৈনিক দু’বার জোয়ার এলে ইলিশ ধরতে মেঘনায় মোহনায় বিচরণ করতে হয় জেলেদের। কিন্তু যখন ৫হাজার টাকা খরচ করে ২হাজার টাকা ভাগ্যে জোটেনা তখন তাদের মাঝে সীমাহীন আপসোস আঘাত হানে। পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা ভাত ও পরনের পোষাক দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মেঘনার পাড়ে যার সাথেই যখন ইলিশ কথা হয়, তখনই উঠে আসে ইলিশ সংকটের বিষয়টি। সবার মুখে কেবল শুনা যায় হাহাকার। জেলে, ঘাট মালিক কিংবা ইলিশ ব্যবসায়ী সবার মুখ থেকে একই কথা। যে কয়েকটি ইলিশ পাওয়া যায় তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাহিরে। এসব মাছ দূর থেকে আসা ধনীরা ছাড়া কারো ভাগ্যে মিলেনা।
জেলেরা জানে শুধু নদীতে মাছ শিকার করতে। গুঁটি কয়েক জেলে কৃষি কাজ কিংবা অন্যান্য কাজ করতে করেন। ইলিশ সংকটের এই সময়ে অধিকাংশ
জেলেরাই এখন বেকার জীবনে দিশেহারা হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছেন। কেউ দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন আবার কেউ কেউ তাস খেলছেন। কেউবা আবার সুঁই দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত জাল মেরামত করছেন।
ইলিশ সংকট নিয়ে কথা হয়, মেঘনার জেলে কমলনগরের চর মার্টিনের মোঃ মোতাছিন মাঝি’র (৫৫) সাথে। তিনি বলেন, ‘ইলিশ অনকম হড়ে, বাবুরে আঁই অন বাইত বই রইছি (ইলিশ এখন কম পাওয়া যায়, বাবা এখন আমি বাড়িতে বেকার)। গাঙে ক’দিন যাই হে রুকুম ইলিশ হাই ন, বেকে লসে হড়ি গেছে (নদীতে কিছু দিন গেলাম তেমন ইলিশ পেলাম না, সব জেলেরা এখন ক্ষতিতে পড়ছে)”।
বাতির খাল ইলিশ ঘাটের আড়ৎদার মীর আকবর হোসেন বলছিলেন, “যেভাবে ইলিশ বিক্রির লক্ষ ছিলো, তার কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ধার-দেনায় জেলেরা এখন পঙ্গুর মতো জীবন-যাপন করছেন”। এ বিষয়ে সার্বিক আলাপকালে বৃহত্তর নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় মতিরহাট ইলিশ ঘাটের সভাপতি, স্থানীয় চর কালকিনি ইউপি সদস্য, তরুণ উদ্যমী মেহেদী হাসান লিটন একুশ শতককে বলেন, “ইলিশ মাছ একেবারে খুব কম পড়ে, জেলেরা
নদীতে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আশা করেছিলাম নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে আটকা পড়বে জেলেদের জালে। কিন্তু বাস্তব প্রেক্ষাপটে জেলেদের স্বপ্নটা মাটির সঙ্গেই মিশে গেলো”।
সময় যত বাড়ছে, জেলেদের অভাব তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওরা ঠিকমতো পেলোনা ভিজিএফের চাউল, ওরা এখন অসহায়।
ওদের সমস্যা সমাধানে প্রশাসন এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা ভূক্তভোগী জেলেদের।
পাঠকের মন্তব্য