তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এখন বহুজাতিক কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশি লুটেরা জালিয়াতদের চারণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন কোম্পানি শেভরন নিজেদের ইচ্ছামতো চীনা একটি অপরিচিত অদক্ষ কোম্পানির কাছে বাংলাদেশের সবচাইতে সমৃদ্ধ গ্যাসব্লক বিক্রি করেছে। সরকার ‘কিছুই জানি না’ বলে দায়িত্ব এড়াতে চাইছে কিন্তু এটা যে দুর্নীতিযুক্ত বোঝাপড়ার মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়েছে তা সহজবোধ্য। এই মার্কিন কোম্পানি শেভরনকে বিভিন্ন সরকার এযাবত অনেক বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। উপরন্তু ১৯৯৭ সালে ১৪ জুন মাগুড়ছড়া বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কমপক্ষে ২৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নষ্টের দায় দায়িত্ব শেভরনের, সে বিষয়ে ফয়সালা করবার কোনো উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি। এই ক্ষতির পরিমাণ তাদের তথাকথিত বিনিয়োগের চাইতে বেশি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় করে জাতীয় সংস্থার হাতে গ্যাসক্ষেত্র ফিরিয়ে আনাই ছিলো যথাযথ।’
তাঁরা বলেন, ‘প্রাকৃতিক সম্পদে জাতীয় মালিকানা ও কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সরকার হাঁটছে উল্টোপথে। বিভিন্ন গোষ্ঠীকে দেয়া বাড়তি সুবিধা আড়াল করতে সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সম্পর্কে জনগণকে দিচ্ছে ভুল তথ্য। যেকারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারি পরিসংখ্যানের সাথে দেশজুড়ে ভয়াবহ লোডশেডিং মেলে না।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘জনগণের স্বার্থের বিপরীতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় গুরুত্ব দেয়ার কারণেই একদিকে গ্যাস সংকট থাকলেও গ্যাস রপ্তানি চুক্তি করা হয়েছে, এনটিপিসিসহ কয়েকটি ভারতীয় ও দেশি কোম্পানির স্বার্থে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় প্রাকৃতিক ব্যবস্থা সুন্দরবন বিনাশ করা হচ্ছে, শেভরন ও নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোনো চেষ্টা না করে গোপন সমঝোতা করা হয়েছে, বাপেক্সকে সুযোগ না দিয়ে গাজপ্রমকে অনেক বেশি দামে গ্যাসখাতে আনা হয়েছে, রিলায়েন্স আদানির সাথে বিনাটেন্ডারে চুক্তি করা হয়েছে, দায়মুক্তি আইন দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে অপরাধীদের, খুন ও জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত এশিয়া এনার্জি (জিসিএম)কে বেআইনীভাবে ফুলবাড়ী কয়লা খনি দেখিয়ে শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে দেয়া হচ্ছে, এলাকায় মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করবার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এগুলোর সবগুলোর সাথেই বড় আকারের দুর্নীতি জড়িত বলে আমরা মনে করি।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশ ও মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে কতিপয় দেশি-বিদেশি গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষা আর দেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও রাশিয়ার বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার কাজই এখন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রধান ভূমিকা। জ্বালানি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ভয়ংকর হুমকি, জাতীয় স্বার্থবিরোধী এসব তৎপরতায় অতীতে যারা যুক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে যারা যুক্ত আছেন তাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায দাঁড়াতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মতোই জ্বালানি অপরাধীদের বিচার এখন আমাদের বড় কর্তব্য।’
পাঠকের মন্তব্য